15 Jun
  • By admin

নেপালে ২৮দিন

বাহারুল ইসলাম, সেলস্  অ্যান্ড সাপোর্ট ইঞ্জিানয়ার

 

বিগত ২ বছর ধরে প্রোজেক্টের কাজে অনেকবারই নেপালে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। প্রতিবারই যেন মনে হয় নতুন করে দেশটিকে দেখছি বা সেই দেশের মানুষ জনকে জানছি। প্রতিবারই নতুন কিছু জানা হয়, হয় নতুন অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে আমার এই লেখা।

যেহেতু কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া, তাই পুরোটা সময় শহর থেকে দূরে ফার্মে থাকা হয়  এবং কাজ শেষ হওয়া মাত্রই মন ছটফট করে ওঠে দেশে ফিরে আশার জন্য। এবার ছিল ২৮দিনের সফর। চিতওয়ান শহরে Daunne Poultry Pvt Ltd নামে একটি নেপালি কোম্পানিতে ইন্সটলেশন হচ্ছে  Astiono ‘র ৬টি লেয়ার শেড। এর মাঝে ২টি পুলেট হাউস ও ৪টি প্রোডাকশন হউস। প্রতিটি ঘরে থাকবে ৫০,০০০ লেয়ার। শুরুতেই বলে রাখি, চিতওয়ানকে নেপালের “পোল্ট্রি হাব” বলা হয়। এ শহরটি পোল্ট্রি ব্যাবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এ জেলায় প্রায় ৫০শতাংশ মানুষ পোল্ট্রি ব্যবসার সাথে যুক্ত । এই জেলাতে সর্বাধিক সংখ্যক ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে এবং আমাদের অধীকাংশ প্রোজেক্ট সংক্রান্ত কাজ থাকে এই জেলাতেই।

এবার আসি মূল গল্পে, যাত্রা শুরু হয় ৭ই এপ্রিল, ২০১৯। ঢাকা- কাঠমুন্ডু- চিতওয়ান। কাঠমুন্ডুতে নেমেই কোম্পানির গাড়ি করে রওনা করি  চিতওয়ানের উদ্দেশ্যে। সময় লাগে প্রায় ৫/৬ ঘণ্টা। কোম্পানির একজন শেয়ার হোল্ডার- মিঃ রাজন পিয়ার সাথে চিতওয়ান শহরের কাছাকাছি কাবিলাস রিসোর্টে যাই রাতের খাবার খেতে। রিসোর্টটি পাহাড়ের উপরে, উপর থেকে শহরের দারুন ভিউ দেখা যায়, সাথে ছিল মিঃ রাজন পিয়ার দুই বন্ধু। আমি খুবই সাদামাটা অর্ডার করলাম- ভাত, ডাল, সবজি ও ডিম। আর উনারা দিলেন, ফিস ফ্রাই, বাদামের সালাদ ও কবুতর ফ্রাই। প্রথমে বাদামের সালাদ আসলো, ওনাদের সাথে আমিও একটু খেলাম। তারপর আসলো ফিস ফ্রাই- সেটিও ওনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কিন্তু আমার ভাত-ডালের কোন খবর নাই। আমি আমার ভাতের আশায় বসে থাকতে থাকতে এক বোতল কোক শেষ করলাম। তারপর প্রায় ১ঘন্টা পর রেস্টুরেন্টের লোক এসে বলে ভাত খাব কিনা, ততক্ষণে ওনদের সাথে খাবার টেস্ট করে আমার পেট ভরে গিয়েছে। আমার অর্ডার মানা করে দিয়ে ফিরে এলাম চিতওয়ান শহরে হোটেলে পৌঁছেই দিলাম এক ঘুম। পরেরদিন সকালে নাস্তার মেনু ছিল- আলু পরাটা, ডিম ও ফুলকপি। একটু বলে রাখি, নেপালিয়ানরা ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ রং চা খাবে, এর এক ঘণ্টার মধ্যে একটি সিদ্ধ ডিমের সাথে ছোলা/ বুট, চিরা এবং নুডুলস খেয়ে থাকে। তবে ডিম হলো তাদের সকালের না¯তার একটি ‘Must Item’. এবং নুডুলসকে তারা বলেন চাও ছাও।

দুপুরের খাবার শেষ করে রওনা করলাম ফার্মের দিকে।  চিতওয়ান শহর থেকে প্রায় ৭৫ কি.মি দূরে Daunne Poultry Pvt Ltd ‘র ফার্ম। পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। ফার্মে নেমেই দেখলাম ২টা শেডের মালামাল চলে আসছে এবং একটা শেডের অ্যাংকর বোল্টের কাজ চলছে। তাদের কাছে গিয়ে কথা বললাম ও কিছুটা সময় তাদের কাজের অগ্রগতি দেখে ঘুমানোর জন্য ফ্যাক্টরির ভিতরেই গেস্ট হউসে চলে গেলাম।

তৃতীয় দিন, সকালে উঠেই পেট ভরে না¯তা করেই নেমে পরলাম কাজে। প্রথম যে দুটি পুলেট শেডের কাজ চলছে তার একটি শেডের দৈর্ঘ্য ১০২ মিঃ ও প্রস্থ্য ১০ মিঃ করে, এবং দ্বিতীয়টির  দৈর্ঘ্য ১০৮ মিঃ ও প্রস্থ্য ১০ মিঃ। আমি ৫জনকে সাথে নিয়ে শুরু করলাম দ্বিতীয় শেডের বক্স (Stamp) সেট করতে, যা অ্যাংকর  বোল্টে সেট করার জন্য নির্দিষ্ট  দূরত্বে করতে হয়। এরপর কাজ শুরু হল- কলাম (Column), পারলিন ক্রস, টাইরড ইত্যাদির কাজ। এর মাঝে একটি অসুবিধা হলো শ্রমিকদের নিয়ে। সাধারণত নেপালে বাংলাদেশী কর্মীরা পোল্ট্রি ফার্মের কাজ করে থাকে । কিন্তু Daunne Poultry Pvt Ltd.  চেয়েছিলেন আমরা যেন নেপালি কর্মী দিয়ে কাজ করি। ব্যস্ হয়ে গেল বিপদ। যাদের নেয়া হয়েছিল তারা অনেকই আগে শেডের কাজের অভিজ্ঞতা নাই, কেউ কেউ আগে ব্রিজ বা ওয়ারহাউসের কাজ করেছে কিন্তু পোল্ট্রি শেডের কাজ এই প্রথম । এর মাঝে আমি পারিনা অতো ভাল নেপালি ভাষা তাই তাদের মানিয়ে বুঝিয়ে কাজ করতে কিছুটা গতি কমে আসলো। তার উপর নেপালিদের কাজের সময় আবার ভিন্ন। শ্রমিকদের কাজের সময় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, দুপুরে ২ ঘন্টা লাঞ্চ ও গরমের জন্য বিরতি। দুপুরে খাবারে নেপালিরা বেশীরভাগ সময় সবজি ও সালাদ খেয়ে থাকে। সবজিতে থাকে সয়া ও সালাদে থাকে মুলা ও শসা। আর রাতের খাবারে মুরগীর মাংস খেয়ে থাকে যেহেতু মাছ খুব কম পাওয়া যায়।

যাইহোক এভাবেই প্রথম ২১দিন পার করলাম ৭জন কর্মী নিয়ে, এরপর ২২তম দিনে আরও ২জন কর্মী যুক্ত হল। এই ৯জনকে নিয়েই ২য় শেডের কলাম ইনস্টল করলাম ও প্রথম শেডের ছাদের কাজ ধরলাম। ছাদের কাজ শেষ করে, শেডের সাইড ওয়ালের ফ্রেম এবং সিলিংর ফ্রেম শেষ করেই ২৮দিন পার করলাম। এরপর দেশে ফিরলাম পরবর্তী সিপমেন্ট না পৌঁছানো পর্যন্ত।