13 Jun
  • By admin

“সুগন্ধা ফিডমিল” বরিশাল অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ফিডমিল প্রতিষ্ঠান যা সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে খাদ্য  উৎপাদন শুরু করেছে।

সুগন্ধা ফিডমিল লিমিটেড “নিরাপদ খাদ্য, নিরাপদ স্বাস্থ্য” বাস্তবায়নের লক্ষ্য এবং স্লোগান নিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে “প্রিমিয়ার ফিড “ ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রকার ফিড। যেখানে রয়েছে প্রতি ঘন্টায় ৫-৮ টণ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন মাছের ভাসমান খাদ্য ও প্রতি ঘন্টায় ৫-৮ টণ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন মাছের ডুবন্ত খাদ্যের একটি প্লান্ট। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে এটিই প্রথম ফিডমিল যেখানে প্রকৃতই চিংড়ি ফিড উৎপাদনের মূল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে । এখানে রয়েছে প্রতি ঘন্টায় ১২-১৫ টণ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ব্রয়লার খাদ্য ও প্রতি ঘন্টায় ১০ টণ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন লেয়ার খাদ্যের আরেকটি প্লান্ট । এছাড়াও এখানে কাঁচামাল সংরক্ষনের জন্য রয়েছে ৪৫০০ টণ ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি সাইলো এবং জাহাজ থেকে মালামাল   লোড –আনলোড করার জন্য পোর্ট ফ্যাসিলিটি ।

সুগন্ধা ফিডমিলের উদ্দোক্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মো: জিল্লুর রহমান খান এবং চেয়ারম্যান জনাব মো: মিজানুর রহমান মোল্লা । এই অঞ্চলে এতোবড় ফিডমিল প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পেছনে রয়েছে একজন  সফল উদ্দোক্তার গল্প ।

তরুণ বয়সে জনাব জিল্লুর রহমান পুলিশ কর্মকর্তা বাবার পেশা অর্থাৎ পুলিশে যোগ দেওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতেন । বরিশাল থেকে চট্টগ্রামের পুলিশ লাইনে তিনি একাধিকবার চেষ্টা করেছেন পুলিশে যোগ দেয়ার জন্য । প্রতিবারই পুলিশ অফিসার পিতার নির্দেশে উনাকে প্রত্যাক্ষান করা হয়। পরে পিতার উৎসাহে ব্যবসায় আসেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা এই তরুণ উদ্যোক্তা ।

১৯৯৬ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় এম.এ পাশ করে স্বজনদের কাছে ধার-দেনা করে উপজেলা সদরে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। পরে এই ব্যবসা বদল করে মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করেন।

ওই সময় উত্তরবঙ্গ থেকে চাল আনতে গেলে পড়তেন বিপাকে। টাকা দিয়েও নির্ধারিত সময়ে চালের সরবরাহ পেতেন না। ঝালকাঠি মোকাম থেকে আনতেন মুদি মাল। আর চাল আনার জন্য বগুড়া বা নওগাঁর চালের মিল মালিকদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হতো। শুধু তাই নয়; উত্তরবঙ্গ থেকে যে ট্রাক তাদের চাল দিয়ে যেত, ওই ট্রাক বরিশাল অঞ্চল থেকে ধান বোঝাই করে নিয়ে যেত। এসবের অনুসন্ধানে ২০১০ সালে জিল্লুর রহমান উত্তরবঙ্গে যান এবং চাল মিলগুলো ঘুরে দেখে আসেন। টিপ দস্তখত দেওয়া বা অক্ষর জ্ঞান জানা লোকেরা যদি অটো রাইচ মিল পরিচালনা করতে পারেন তাহলে তিনি কেন পারবেন না, এই মনোবল নিয়ে পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন

এর সমাধান খুঁজতে গিয়ে অবশেষে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০১২ সালে নিজেই গড়ে তুললেন অটোমেটিক রাইচ মিল। বরিশাল নগরীর দপদপিয়া থেকে নলছিটি উপজেলার কুমারখালি গ্রামটিকে বিচ্ছিন্ন করেছে কেবল সুগন্ধা নদী। এর তীর ঘেঁষে ৪ একর ৮৪ শতক জমির ওপর গড়ে তোলেন স্বপ্নের সুগন্ধা অটো রাইচ মিলটি।

জনাব জিল্লুর রহমান বলেন, তার অটো রাইস মিল গড়ার পরিকল্পনার কথা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জানালে অনেকে নিরুৎসাহিত করেন। বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জ ও দপদপিয়ায় গড়ে ওঠা ২টি অটো রাইচ মিলের মালিকরা উদ্বোধনই করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে একদিন পূবালী ব্যাংকের পরিচালক সৈয়দ মেয়াজ্জেম হোসেনের সাথে আলাপ করলে তিনি উৎসাহ যোগান। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুগন্ধা অটো রাইচ মিলের উদ্বোধন হয় । ওই সময় প্রতিদিন ২ শিফটে ৪৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে পারতেন। বাজারে চালের চাহিদা থাকায় দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করেন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিট উদ্বোধনের পর থেকে ডবল শিফটে প্রতিদিন ১শ ৮০ মেট্রিক টন চাল প্রতিদিন উৎপাদন করতে পারেন। এজন্য বোরো মৌসুমে ঝালকাঠি, উজিরপুর, আগৈলঝাড়া থেকে গোপালগঞ্জের পুরো জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করেন।

তার বক্তব্য বরিশাল অঞ্চলে সর্বাধিক আমন ধান উৎপাদিত হয়। তাই আমনের মৌসুমে উত্তরবঙ্গ নয়; এই অঞ্চল থেকে সরকার চাল ক্রয় করলে কৃষক ও মিল মালিক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি উত্তরঙ্গ থেকে চাল কিনে বরিশালে আনার পরিবহন খরচ বাঁচবে।

সুগন্ধা অটো রাইচ এন্ড এগ্রো ফুড প্রসেসিং মিলটি, এখন বিভাগের সবচেয়ে বৃহৎ চাল মিলে পরিণত হয়েছে।

চাল কলের পর ডালের মিল চালু করেছেন জনাব জিল্লুর রহমান। ৩০ কোটি টাকার এসব প্রকল্প কেবল নিজের ভালো থাকার জন্য নয়, সমাজের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার ভাবনা থেকে। যেখানে ইতঃমধ্যেই চাল ও ডাল কলে ১০০ জন বেতন ভুক্ত কর্মচারী এবং প্রতিদিনের মজুরীপ্রাপ্ত আরও শত জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। শুধু তাই নয় এই সমস্ত মিল কারকানায় মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হয়েছে তেমনি এর পাশাপাশি এলাকায় এসমস্ত শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । এক কথায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে পুরো অঞ্চলের মানুষ ।

বৃহত্তর জনগোষ্টির কর্মসংস্থানের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মো: জিল্লুর রহমান খান এবং মো: মিজানুর রহমান মোল্লা –এর আরো একটি পদক্ষেপ সুগন্ধা ফিডমিল । এলাকার মৎস ও পোল্ট্রি খামারীরা পাবেন ন্যায্য মূল্যে  টাটকা ও পর্যাপ্ত খাদ্য, সম্ভাবনা বাড়বে  লাভজনক ভূট্টা চাষের যা ফিডমিলের অন্যতম কাঁচামাল এবং কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০০ মানুষের ।

জনাব জিল্লুর রহমান জানান শতভাগ আস্থা, বিশ্বাস এবং গুনগতমান বজায় রেখে দেশের অন্যতম প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চিকস্‌ অ্যান্ড ফিডস্‌ লিমিটেড এবং চীনের বিখ্যাত ফিডমিল নির্মাতা  FCM –এর যৌথ তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে এই সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠনটি ।

জনাব জিল্লুর রহমানের সামনের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে তার মুকুটে যেমন আরেকটি সাফল্যের পালক যুক্ত হবে, তেমনি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে এবং সুফল পাবেন বিভিন্নভাবে। আমরা সকলেই এই সমস্ত মহতি উদ্দোগের সফলতা কামনা করি ।